Pages

Subscribe:

Thursday, April 30, 2015

পেটের যত অসুখ

আমাদের দেশে বেশিরভাগ লোক যে রোগটিতে ভোগেন তা হল পেটের পীড়া। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এ পীড়ার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। পেটের পীড়া বলতে আমরা সাধারণত বুঝি আমাশয়, ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা কিংবা হজমের অসুবিধা। পেটের পীড়াকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, খাদ্যনালি (পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র কিংবা বৃহদান্ত্রের রোগ)। দ্বিতীয়ত, লিভারের প্রদাহ। খাদ্যনালির কারণজনিত পেটের পীড়াকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। * স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়া * দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়ার কারণ হচ্ছে * আমাশয় া রক্ত আমাশয় া ডায়রিয়া আমাশয় অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ যা এন্টাবিমা হিস্টোলাইটিকা নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি মূলত পানিবাহিত রোগ। যারা যেখানে-সেখানে খোলা বা বাসি খাবার খেয়ে থাকেন অথবা দূষিত পানি পান করেন তাদের এ রোগ হয়। শহর অঞ্চলে রাস্তার পাশের খোলা খাবার খেলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে যারা যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করেন, কিংবা নদী ও পুকুরের পানি পান করেন তারা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। এ রোগের উপসর্গ হঠাৎ করে দেখা দেয়। যেমন- ঘন ঘন পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত বা আম মিশ্রিত অবস্থায় যাওয়া, পায়খানায় বসলে উঠতে ইচ্ছা হয় না বা ওঠা যায় না। ক্ষেত্র বিশেষে দিনে ২০-৩০ বার পর্যন্ত পায়খানা হতে পারে। রক্ত আমাশয় রক্ত আমাশায়ের প্রধান কারণ হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যার নাম শিগেলা। এ শিগেলা দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ হল- পেটে তীব্র মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, অল্প অল্প করে বারবার পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং মলদ্বারে তীব্র ব্যথা হওয়া। ডায়রিয়া ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ খাদ্যে নানা ধরনের পানিবাহিত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। * ছোট শিশুদের ডায়রিয়া সাধারণ রোটা ভাইরাস নামক ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। * বড়দের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে যে ডায়রিয়া মহামারী আকারে দেখা দেয়, তার অন্যতম কারণ হল কলেরা। শীতকালে কলেরার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। পাতলা পায়খানা হলে যদি চাল ধোয়া পানির মতো হয় তবে সেটা কলেরার লক্ষণ। এর সঙ্গে তলপেটে ব্যথা হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ঘনঘন পায়খানায় যাওয়া এবং শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া এ রোগের উপসর্গ। এ সময়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পেটের পীড়ার অন্য কারণগুলোর হচ্ছে পিত্তথলি, পাকস্থলী, অগ্নাশয় এবং অন্ত্রের প্রদাহ। -দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়ার মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়। এ দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- * ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম * খাদ্য হজম না হওয়াজনিত পেটের পীড়া * বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত পেটের পীড়া এ অসুখগুলো মূলত ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের রোগ। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) অল্প বয়স্ক বা উঠতি বয়স্ক, ছাত্রছাত্রী, যারা নবীন চাকরিজীবী তাদের মধ্যে ওইঝ রোগটি বেশি দেখা যায়। এ রোগের লক্ষণ হল পেটে মোচড় দিয়ে ঘনঘন পায়খানা হওয়া, যা সকালে নাশতার আগে ও পরে বেশি হয়। IBS হলে অনেকের পায়খানা নরম বা অনেকের পায়খানা কঠিন হয়। কঠিন বা নরম যাই হোক না কেন রোগীর পায়খানার সঙ্গে বাতাস যায় এবং পেটে অস্বস্তি ভাব হয়। অনেকে বলেন, দুধ, পোলাও কোরমা, বিরিয়ানি খেলে এটি বেশি হয়। এটি সঠিক নয়। ওইঝ যাদের হয় তাদের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা কম। খাদ্য হজম না হওয়াজনিত পেটের পীড়া ক্ষুদ্রান্ত্র এবং অগ্নাশয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত, সাদা পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে হজম না হওয়া খাদ্য কণার মিশ্রণ এবং নির্গত মল পানির ওপরে ভাসতে থাকা এ রোগের উপসর্গ। এর সঙ্গে পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া কিংবা ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমে যাওয়া এ রোগের লক্ষণ। বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত পেটের পীড়া এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি। আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কম, উন্নত বিশ্বে এ রোগ বেশি হয়। এ রোগের লক্ষণ হল আম ও রক্তমিশ্রিত পায়খানা হওয়া, জ্বর কিংবা জ্বর জ্বর ভাব হওয়া এবং শরীর আস্তে আস্তে ভেঙে যাওয়া। সব বয়সের মানুষের এ রোগ হয়। Colonoscopy নামক পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা পেলে এ রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পিত্তথলির পাথর, পিত্তনালির প্রদাহ, অগ্নাশয়ের প্রদাহ এবং পাকস্থলীর ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহের কারণে পেটের পীড়া হতে পারে। পিত্তথলির পাথর ও পিত্তনালির প্রদাহজনিত পেটের পীড়া এ রোগে আক্রান্তদের তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে। কয়েকদিন পরপর ব্যথা ওঠে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত তা থাকে। ব্যথার সঙ্গে বমি ও জ্বর হতে পারে। ব্যথা পেটের ডানপাশের উপরিভাগে অনুভূত হয়। ব্যথা তীব্র হলে রোগী কষ্টে কাতরাতে থাকেন। অগ্নাশয়ের প্রদাহজনিত পেটের পীড়া অগ্নাশয়ের কাজের ওপর নির্ভর করে হজমের ক্ষমতা এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখা। স্বল্পমেয়াদি অগ্নাশয়ের প্রদাহ হলে তাকে Acute Pancreatitis বলে, যার অন্যতম কারণ- * ভূরিভোজ করা। * পিত্তনালি বা পিত্তথলিতে পাথর * অ্যালকোহল পানে আসক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃদু বা সহনীয় ব্যথা ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসায় বিলম্ব কিংবা অবহেলা করলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ পেটের উপরিভাগে দীর্ঘদিন বারবার ব্যথা হওয়া, Peptic Ulcer রোগের লক্ষণ যা পাকস্থলীর প্রদাহের কারণে হয়। এ প্রদাহ দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগকে পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ বলা যায়। আমাদের দেশে ১২ শতাংশ লোক Peptic Ulcer-এ ভুগছেন। এছাড়া যারা অনিয়মিত খান, অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাদের এ রোগ বেশি হয়। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, খালি পেটে ব্যথা, শেষরাতে ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা। এ রোগ সেরেও সেরে ওঠে না। খাবারের প্রতি অনীহা, অরুচি, অস্বস্তি, ওজন কমে যাওয়া- এসবের অন্যতম কারণ দীর্ঘমেয়াদি লিভারের প্রদাহ। এ প্রদাহ এমন আকার ধারণ করে যা দীর্ঘস্থায়ী জটিল লিভার সিরোসিসে রূপ নিতে পারে। পেটের পীড়ার চিকিৎসা স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর শরীর খুব তাড়াতাড়ি পানিশূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থা প্রতিরোধের জন্য রোগীকে প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইন খাওয়ানো বাঞ্ছনীয়। * রোগীর শরীরে জ্বর থাকলে এবং পেটে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। * শিশুদের ক্ষেত্রে যেহেতু ভাইরাসজনিত কারণে পেটের পীড়া বেশি হয়; তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে কোনো ধরনের ওষুধ না খাওয়ানোই শ্রেয়। তবে শিশুর শরীর যাতে পানিশূন্য না হয়, সেজন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে সব ধরনের খাদ্য প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। যদি শিশু মায়ের দুধ পান করে থাকে, তবে কোনো অবস্থাতেই তা বন্ধ করা যাবে না। * অনেকে কবিরাজি, গাছগাছড়া বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে এ জাতীয় পেটের পীড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে রোগীর ভোগান্তিই কেবল বাড়ে এবং রোগও জটিল রূপ ধারণ করে। লেখক : লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ - See more at: http://www.jugantor.com/stay-well/2013/09/07/26496#sthash.8HuldiP1.dpuf

বিনা অপারেশনে হার্টের রক্তনালী ব্লক চিকিৎসা মেশিন চালু হচ্ছে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : রায়ণগঞ্জের হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকার ইসলাম হার্ট সেন্টার বিনা অপারেশনে হার্টের রক্তনালী ব্লকের চিকিৎসা মেশিন (ইইসিপি) চালুর লক্ষ্যে সাংবাদিক সাথে মত বিনিময় সভা করেছেন হার্ট সেন্টার কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুর ২ টায় নারায়ণগঞ্জ কাবের কনভেনশন রুমে এ মত বিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলাম হার্ট সেন্টারের স্বত্তাধিকারী ডা: মো: নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ডা: শাহনেওয়াজ, ডা: সালেহা, ডা: মঞ্জু প্রমুখ। এ সময় ডা: নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৫ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ কাবের কমিউনিটি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেশিনটির উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক (অব:) কে এম এইচ এস সিরাজুল হক। ডা: নুরুল ইসলাম বলেন, সিসিইউ হলো বিনা অপারেশনে হার্টের রক্তনালী ব্লক এর তৃতীয় ধারার চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি বাংলাদেশের ৪র্থ ও ঢাকা জেলার বাইরে প্রথম কোন জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এ মেশিনটি স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এ মেশিনে চিকিৎসা সেবা অনেক সাশ্রয়ী। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। দৈনিক এক ঘণ্টা করে থেরাপি নিলেই চলবে। একজন রোগীকে সর্বমোট ৩৫ ঘণ্টা থেরাপী নিতে হবে। সপ্তাহে ৫ দিন এক ঘণ্টা করে ৫ ঘণ্টা থেরাপী নিতে হবে। এভাবে মোট ৩৫ ঘণ্টা থেরাপী নিলে একজন রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। আর এ চিকিৎসায় একজন রোগী সুস্থ হয়ে উঠলে আগামী ৫ বছরে জন্য রোগী ৮৮ ভাগ নিরাপদ থাকবে। এটা বিশ্বে ৯২টি দেশে পাঁচ হাজার বাইশ জন রোগীর উপর জরিপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ চিকিৎসা নিতে একজন রোগীকে প্রতিঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। এভাবে মোট ৩৫ ঘণ্টা থেরাপী নিতে হবে। তবে যদি কোন রোগী এক কালীন টাকা পরিশোধ করে তবে তাকে এক লাখ টাকার অধিক পরিমাণের বাকি টাকা ছাড় দেয়া হবে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হৃদপিন্ড বা হার্টের রোগ-ব্যধি, চিকিৎসা ও পরামর্শ!!

হার্ট ব্লক হয়েছে বললেই আমাদের মনে যে রোগটির ছবি ফুটে উঠে তা হলো আসলে ইশকেমিক ডিজিজ। হার্ট ব্লক নামক প্রচলিত শব্দটি কিন্ত এই রোগের ক্ষেত্রে ভুল নামকরণের শিকার, কারণ হার্ট ব্লক নামে সত্যিই একটি হৃদ রোগ আছে যার সাথে এই রোগের মিল খুব সামান্যই। তবে হার্ট এর ধমণী তে ব্লক (করোনারি আরটারী স্টেনোসিস) হয়েছে বললে সেটা কিন্ত এই রোগটিকেই বোঝায়। তাই পাঠক এই ক্ষেত্রে একটু যত্নবান হবেন বলে আশা রাখবো। মেডিকেল পরিভাষায় একে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়। ধমণীর ব্লক কীঃ হৃদপিন্ড শরীরের সর্বত্র রক্ত সরবরাহ করে, এই প্রবাহিত রক্তের কাজ খুব সহজ করে বললে হবে সর্বত্র পুষ্টির যোগান দেয়া। হৃদপিন্ডের নিজেরও পুষ্টির প্রয়োজন আছে আর তা আসে মোটামুটি মাঝারী মাপের তিনটি ধমণীর সাহায্যে। এদের নাম যথাক্রমে ডান পাশে আর,সি,এ (রাইট করোনারি আরটারি), মাঝে এল,এ,ডি (লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং), এবং যেটি হৃদপিন্ড কে ঘুড়ে আসে তার নাম এল,সি,এক্স (লেফট সারকামফ্লেক্স) আরটারি। কোনো কারণে যদি এসব ধমণী সরু হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে করোনারি আরটারীর স্টেনোসিস হয়েছে বা ব্লক হয়েছে শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ধমণীর গায়ে চর্বি জমে তা ক্রমান্বয়ে সরু হতে থাকে। এটা যদি শতকরা ৫০ ভাগ এর বেশি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হৃদপিন্ডের রক্ত প্রবাহ মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে থাকে এবং রোগী সামান্য পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। হার্ট এটাক / এমআই / স্ট্রোকঃ হার্ট এটাক রোগটিকে ভুলবশত স্ট্রোক বলা হয়ে থাকে। স্ট্রোক মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ জাতীয় রোগ আর হার্ট এটাক হৃদপিন্ডের একটি রোগ, যার মেডিকেল পরিভাষা হল মায়কার্ডিয়াল ইনফার্কশন, ছোট্ট করে একে বলা হয় এম,আই। হার্ট এর ধমণী গুলো সরু হয়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত প্রবাহ আশংকা জনক হারে কমে যায় এবং হার্টের কোষ গুলো মৃত্যু বা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়- এর ই নাম ইশকেমিয়া। কেতাবী নাম মায়কার্ডিয়াল ইশকেমিয়া। ইশকেমিয়া হলে বুকে তীব্র চাপ ও ব্যাথা অনুভুত হয় তখন এই সমস্যাটিকে বলে এনজাইনা পেক্টোরিস। এনজাইনা শব্দের বাংলা অর্থ ব্যাথা আর পেক্টরিস এর অর্থ বুক। যদি ইশকেমিয়া চলতেই থাকে তবে হার্ট এর কোষ গুলো একসময় মারা যায়, এই অবস্থাটির নামই মায়কার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা এম,আই- যা আমরা প্রচলিত অর্থে হার্ট এটাক হিসেবে চিনি। লক্ষনঃ ইশকেমিয়া হলে রোগীর বুকের বাম দিকে প্রচন্ড ব্যাথা বা এনজাইনা হয় এবং রোগী বুকে তীব্র চাপ অনুভব করে। অনেক রোগীই অভিযোগ করে যে তার বুকের উপর ভীষন ভারী একটা কিছু চেপে বসে আছে। ব্যাথার তীব্রতা বুকে বেশী থাকলেও এটা বুক থেকে গলা, গাল, মাড়ি, কান, বাম হাত এবং আশে পাশে ছড়িয়ে পরতে পারে। একে রেফার্ড পেইন বলা হয়। বুকের ব্যাথা ১ থেকে ৩ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে এটা কখনই ৩০ সেকেন্ড সময়ের কম দৈর্ঘের হয়না। আবার ১৫ মিনিটের বেশী স্থায়ী হওয়ার নজিরও খুব কম। এনজাইনা বা ব্যাথা শুরু হয় সাধারণত কোনো একটা পরিশ্রমের কাজ করার সময় যেমন দৌড়ানো বা জোরে হাটা ইত্যাদি। তবে পেট ভরে খাবার খাওয়া, যৌন ক্রিয়া এমনকি হঠাৎ রেগে যাওয়া বা উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ও এনজাইনা শুরু হয়ে যেতে পারে। ব্যাথার সাথে রোগীর অন্য উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, পেট ফাপা লাগা, অস্থির লাগা, বুক ধড়ফর করা ইত্যাদিও থাকতে পারে। পরিশ্রম বন্ধ করে বিশ্রাম নিলে এই ব্যথা সাথে সাথে সাময়িক ভাবে কমে যেতে পারে। রোগ নির্ণয়ঃ বুকের ব্যাথার কারণ হিসেবে এনজাইনা বা এম,আই সন্দেহ হলে প্রথম যে পরীক্ষাটি করা হয় তা হলো একটি ১২ লিডের ইসিজি। ব্যাথার শুরুর দিকে ইসিজি স্বাভাবিক ও আসতে পারে, এজন্য পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার ইসিজি করা লাগতে পারে। এর পর ও যদি ইসিজি স্বাভাবিক আসে এবং এনজাইনা হবার সন্দেহ থাকে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হার্ট এর এনজাইম এর মাত্রা দেখে এই রোগ নিশ্চিত করেন। প্রধানত ট্রপনিন আই এবং সি,কে,এম,বি এনজাইম দুটো দেখা হয়, এছাড়া অন্য এনজাইম ও দেখার প্রয়োজন হতে পারে। এনজাইনা বা এম,আই এর কারণ জানার চুড়ান্ত পরীক্ষা হলো এনজিওগ্রাম করা। সিটি স্ক্যান করে (সিটি এনজিওগ্রাম) অথবা পা কিংবা হাতের ধমনীতে বিশেষ ধরনের ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে- দুভাবেই এনজিওগ্রাম করা যায়। তবে শেষের পদ্ধতিই বেশী কার্যকর। কোনো কোনো রোগী আছেন যাদের মাঝে মাঝে কাজের মধ্যে বুকে ব্যাথা হয় কিন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় হয়না এবং ইসিজি করলেও ধরা পড়েনা তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস টেস্ট বা ইটিটি পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হয়। চিকিৎসাঃ করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ এর চিকিৎসা অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট) এর তত্ত্বাবধানে করা উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ কেবল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞই রোগীর সঠিক অবস্থা বিবেচনা করে আদর্শ চিকিৎসা দিতে পারেন। সহজ করে বললে এনজাইনা জাতীয় রোগে তারা প্রথমেই যে ঔষুধ গুলো দিয়ে থাকেন তার মধ্যে একটি হলো নাইট্রোগ্লিসারিন যা স্প্রে করে, শিরায় অথবা ট্যাবলেট হিসেবেও দেয়া হয়। এছাড়াও রক্তের প্লাটেলেট বিরোধী এসপিরিন বা ক্লোপিডোগ্রেল, উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনের অসুধ, মরফিন জাতীয় শক্তিশালী ব্যাথা নাশক এবং রক্ত তরলকারি হেপারিন বা ইনোক্সাপারিন ও দেয়া হয়। কার্ডিওলজিস্ট অনেক সময় রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে রক্ত তরলকারি ইনজেকশন স্ট্রেপটোকাইনেজ বা এল্টেপ্ল্যাজ জাতীয় অসুধ ও ব্যবহার করে থাকেন। তবে ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ এর চুড়ান্ত চিকিৎসা হলো প্রথমে এনজিওগ্রাম করে কোন ধমনীতে স্টেনোসিস আছে তা নির্ণয় করা এবং সেই অনুযায়ী এনজিওপ্লাস্টি করা বা ব্লক সরিয়ে সে স্থানে স্টেন্ট বসিয়ে দেয়া(যা প্রচলিত আছে রিং পরানো নামে)। অনেক সময়ই স্টেন্ট বসানো সম্ভব হয়না অথবা যৌক্তিক হয়না সেক্ষেত্রে অবশ্যই সিএবিজি বা বাইপাস অপারেশন (প্রকৃত নাম CABG- Coronary Artery Bypass Graft) করে রোগীর স্থায়ী রোগ মুক্তি ঘটান হয়।

ওষুধ ছাড়াই সারিয়ে তুলুন তীব্র মাথা ব্যাথা

যমুনা নিউজ ডেস্ক: মাথা ব্যথা খুব পরিচিত একটি সমস্যা। যেকোন বয়সের মানুষেরাই মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন। মাথা ব্যথা হলে বিশেষ করে বমি বমি ভাব থেকে এবং এক পর্যায়ে বমি হয়। মাথা ব্যথা হওয়ার পরিচিত কারণগুলো হল- মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ক্লান্ত দেহ, সাইনাস সমস্যা, মাইগ্রেন, পানিশুন্যতা, কম ঘুম হওয়া ইত্যাদি। অনেকেরই মাথা ব্যথা হলে ঔষধ খেয়ে থাকেন ব্যথা কমানোর জন্য। কিন্তু এই মাথা ব্যথা আপনি চাইলে ওষুধ ছাড়াই সারিয়ে তুলতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নিই কিছু উপায় পানি আপনার মাথা ব্যথা যদি হয়ে থাকে পানিশূন্যতার জন্য তাহলে সহজেই আপনি মাথা ব্যথা সারিয়ে তুলতে পারবেন। ১। একগ্লাস পানি পান করে নিন যখন আপনার মাথা ব্যথা সাধারণ পর্যায়ে থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে অল্প করে পানি পান করুন। ২। যখন আপনার মাথা ব্যথা করবে তখন যেকোন কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। লেবু মাথা ব্যথার জন্য লেবু খুব উপকারী এবং লেবু দেহের এসিড-এলকালাইন (acid-alkaline ) এর মাত্রা ঠিক রাখে। ১। মাথা ব্যথার সময় কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। পেটে গ্যাসের সমস্যা হলেও অনেক সময় মাথা ব্যথা করে থাকে। ২। লেবুর খোসা গ্রেট করে পেস্ট বানিয়ে নিন ও ব্যথার আক্রান্ত স্থানে দিন দেখবেন কিছুক্ষণ পরেই ব্যথা কমে যাবে। পুদিনা পাতা মাথা ব্যথা হলে পুদিনা পাতা ব্যবহার করেই দেখুন খুব দ্রুত মাথা ব্যথা কমে যাবে। ১। পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরি করুন। পানি বয়েল হয়ে গেলে নামিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। তারপর মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। ২। মাথা ব্যথা সারাতে আপনি পুদিনার পাতার তেল ব্যবহার করতে পারেন। ঘাড়ে, মাথায় ম্যাসাজ করুন ব্যথা কমে যাবে। ৩। মাথা ব্যথার সময় যে বমি বমি ভাব বা বমি হয় তখন পুদিনা পাতা খেতে পারেন। -

গলায় চাকা মানেই ক্যানসার নয়.

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে গিয়ে একদিন হঠাৎ গলার ডান দিকের ফোলা অংশটা নজরে আসে শিপ্রার মায়ের। হাত দিয়েও জিনিসটা অনুভব করতে পারলেন তিনি। চিন্তিত হয়ে শিপ্রাকে ডেকে দেখালে সেও দুশ্চিন্তায় পড়ল বিষয়টি নিয়ে। কী করবে, কার কাছে যাবে—সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে অবশেষে একদিন বিকেলে মাকে নিয়ে সে গেল নাক-কান-গলার একজন বিশেষজ্ঞের কাছে। চিকিৎসক তাঁকে গলার থাইরয়েড গ্রন্থির একটা আলট্রাসনোগ্রাম করতে দিলেন; সঙ্গে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের কিছু পরীক্ষা। রিপোর্টগুলো নিয়ে পরদিন যাওয়ার পর নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ শিপ্রার মাকে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠালেন। এত দিন মাথায় ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নগুলো তাঁর কাছেই প্রথম খুলে বলল শিপ্রা। থাইরয়েডের সমস্যার কথা আজকাল অনেকের কাছেই শোনা যায়। থাইরয়েড আসলে কী? শরীরে এটি কি কাজ করে? থাইরয়েডের সমস্যা মানেই কি ঘ্যাগ রোগ? থাইরয়েডে চাকা থেকে কি ক্যানসার হতে পারে? চাকা হলে বা ফুলে গেলে কি কেটে ফেলে দেওয়া জরুরি? থাইরয়েড একটি অতিজরুরি গ্রন্থি: শিপ্রার মতো এমন সব প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের প্রায়ই হতে হয়। কেননা থাইরয়েড গ্রন্থির নানা সমস্যায় কেবল আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জীবনের বিভিন্ন সময় আক্রান্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপক সুযোগ ও সহজলভ্যতা এবং জনসাধারণ ও চিকিৎসকদের সচেতনতার কারণে এসব রোগ অনেক বেশি করে নির্ণয় করা যাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে থাইরয়েডের সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। থাইরয়েড আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। গলার সামনে অবস্থিত এই গ্রন্থি দুটি অংশে বিভক্ত, যা একটি সরু অংশ বা ইসথমাস দিয়ে সংযুক্ত। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে তৈরি হয় থাইরক্সিন ও ট্রাই আয়োডো থাইরনিন নামে দুটি হরমোন, যা জীবনভর আমাদের নানা শারীরিক কার্য সম্পাদনের জন্য অত্যন্ত দরকারি। শিশুকালে, এমনকি জন্মের আগে থেকেই শিশুর বৃদ্ধি বিশেষ করে মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য এই হরমোন জরুরি। হূদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, ত্বক, কিডনি, যকৃৎ, পেশি অর্থাৎ দেহের এমন কোনো অঙ্গ নেই, যার বৃদ্ধি ও কাজ করার জন্য থাইরয়েড হরমোনগুলোর সহায়তা লাগে না। থাইরয়েড হরমোনের অভাবে শিশুর জন্মগত প্রতিবন্ধিতা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা ও যৌবনপ্রাপ্ত হওয়া ব্যাহত হওয়া, বড়দের ক্লান্তি, কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গন্ডগোল, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, নাড়ি স্পন্দনে সমস্যা, হজম ও কোষ্ঠ সমস্যা, রক্তশূন্যতা, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে ধীরতা, মেয়েদের মাসিক ও গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি যেকোনো প্রকারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সব ধরনের সমস্যায় সব সময় গ্রন্থির আকার বড় হয় না বা চাকা দেখা যায় না। থাইরয়েড গ্রন্থিতে চাকা হওয়ার ব্যাপারটিকে চিকিৎসকদের ভাষায় বলা হয় থাইরয়েড নডিউল, যা কখনো কখনো ক্যানসার হতে পারে বটে, কিন্তু চাকামাত্রই ক্যানসার নয়।
থাইরয়েডে চাকা কী কারণে হতে পারে?: থাইরয়েড নডিউল বা চাকা খুব একটা দুর্লভ ঘটনা নয়। বলা হয়, আমেরিকার জনসংখ্যার শতকরা ৪ ভাগেরই থাইরয়েডে চাকা আছে। আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আবার ধারণা করা হয়, সাধারণ জনগণের, বিশেষ করে নারীদের যদি গলার আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়, তবে শতকরা ৫০ ভাগেরই থাইরয়েডে চাকা পাওয়া যাবে, যদিও তা এমনিতে বোঝা যাচ্ছে না। তবে থাইরয়েডে ৯৫ শতাংশ চাকাই শেষ পর্যন্ত নিরীহ বা ননম্যালিগন্যান্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু ওই রয়ে যাওয়া ৫ শতাংশ ক্যানসারের আশঙ্কার কথা ভেবেই থাইরয়েড নডিউলকে সব সময় একটি বিশেষ বিবেচনায় দেখা হয়। থাইরয়েডে চাকা হতে পারে সাধারণ একটা সিস্ট (তরলপূর্ণ থলে), ঘ্যাগ রোগের অংশবিশেষ, আয়োডিনের অভাবজনিত সাধারণ গয়টার, থাইরয়েডে প্রদাহ, জন্মগত ত্রুটি বা নিরীহ গোছের কোনো টিউমার, যা নিয়ে আদৌ ভয়ের কিছু নেই। আবার এই চাকা হতে পারে থাইরয়েড ক্যানসারের একটি প্রথম এবং কখনো কখনো একমাত্র উপসর্গ, যে ক্যানসার আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে চাকাটি নিরীহ, না ক্যানসার, তা বোঝার জন্য রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস, চাকাটির ধরন-ধারণ, আকার-আকৃতি ইত্যাদি এবং কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কোন চাকাটির ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি: থাইরয়েডের সব সমস্যার মতো চাকাও নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কিন্তু পুরুষের এবং খুব অল্প বয়স আর খুব বেশি বয়সে (যেমন—১৪ বছরের আগে ও ৭০ বছরের পরে) গলায় চাকা হলে তা ভাবনার বিষয় বৈকি। সম্প্রতি গর্ভাবস্থার ইতিহাস ও পরিবারে মা-বোনদের হাইপোথাইরয়েড ও ঘ্যাগ রোগের ইতিহাস থাকলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে এটাও সে রকমই কিছু, ভয়ংকর হয়তো নয়। নিরীহ চাকা সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে একই রকম আছে বা খুব ধীরে বাড়ছে, অন্যদিকে দ্রুত বড় হয়ে ওঠা চাকার ক্যানসার হওয়ার দিকেই ঝুঁকি বেশি। ছেলেবেলায় ঘাড়, মাথা ও গলায় রেডিয়েশন বা বিকিরণ দেওয়ার ইতিহাস থাকাটা খারাপ। অনেক সময় শিশুদের লিমফোমা ও অন্যান্য রোগে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। চেরনোবিল দুর্ঘটনার চার বছর পর নিকটবর্তী বেলারুশ এবং আরও কিছু স্থানে হঠাৎ করে থাইরয়েড ক্যানসারের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই তেজস্ক্রিয় বিকিরণই দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক সেন্টিমিটারের ছোট আকার, নরম চাকা সাধারণত নিরীহ। অপর দিকে মাঝারি শক্ত বা শক্ত চাকা, গলার সঙ্গে সেঁটে থাকা চাকা, দুই সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় আকার, সঙ্গে গলা বা ঘাড়ের অন্যান্য লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, হঠাৎ করে গলার স্বর ভেঙে যাওয়া বা খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি আক্রান্ত হওয়া খারাপ লক্ষণ। রোগীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিস্তারিত ইতিহাস জানার পর এবং হাত দিয়ে চাকা ও গলা অনুভব করার পর চিকিৎসকের উচিত প্রথমেই গলার একটি আলট্রাসনোগ্রাফি করা এবং দেহে থাইরয়েড হরমোনের অবস্থা কী, তা রক্তে পরীক্ষা করে নেওয়া। আলট্রাসনোগ্রাফির কিছু রিপোর্ট চিকিৎসকের জন্য খুবই সহায়ক। বর্তমান কালের হাই রেজ্যুলিউশন আলট্রাসনোগ্রাফি এমন সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন চিহ্নিত করতে পারে, যেমন—হাইপোইকোজেনিসিটি (হ্রাসপ্রাপ্ত শব্দতরঙ্গ), এবড়োখেবড়ো সীমানা বা মার্জিন, মাইক্রোক্যালসিফিকেশন বা চাকার ভেতর ক্যালসিয়াম জমাট বাঁধা, চাকার অভ্যন্তরে রক্তনালির অস্বাভাবিকতা বা ক্যাওটিক আচরণ, আশপাশের লসিকাগ্রন্থি, নার্ভ ও অন্যান্য টিস্যুর অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি, যা চিকিৎসকের সন্দেহ উসকে দিতে বা দূর করতে খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখে। সন্দেহজনক চাকার ক্ষেত্রে এরপর অবশ্যই একটি নিডল বায়োপসি বা এফএনএসি করার প্রয়োজন পড়ে। এতে একটি সূক্ষ্ম সুচ চাকার মধ্যে ঢুকিয়ে খানিকটা টিস্যু বের করে এনে মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখা হয়। নিডল বায়োপসি দিয়েও একটি চাকা ক্যানসার কি না, তা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে বর্তমান বিশ্বে হিস্টোপ্যাথলজিস্টরা একটি থাইরয়েড চাকার ক্ষেত্রে মোট পাঁচ ধরনের রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। হয় তাঁরা বলবেন যে এটি পুরোপুরি বিনাইন বা নিরীহ; সে ক্ষেত্রে ফলোআপ করা ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন নেই। অথবা তাঁরা বলবেন যে এতে ক্যানসার সেল পাওয়া গেছে, অথবা পাওয়া যায়নি, কিন্তু অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ সন্দেহজনক, কিংবা এটি একটি ফলিকুলার কোষ দিয়ে তৈরি টিউমার, যা ক্যানসার হতেও পারে, না-ও হতে পারে। এই সব কটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত যাবে অপারেশনের পক্ষে। যদি হিস্টোপ্যাথলজিস্ট বলেন যে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না স্পষ্ট করে, যা প্রায়ই ঘটে থাকে, তবে পরীক্ষাটি পুনরায় করতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। সাধারণত থাইরয়েড চাকা যদি ক্যানসার হয়, তবে তা থাইরয়েড হরমোনের ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। হরমোনের রিপোর্ট সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকতে পারে। বরং হাইপার থাইরয়েড বা হরমোনের আধিক্য সাধারণত কখনোই ক্যানসারের ক্ষেত্রে ঘটে না। থাইরয়েড ক্যানসারের চিকিৎসা: থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর চাকায় ক্যানসারের চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে এর ধরন, ছড়িয়ে পড়ার সীমা ও স্টেজিংয়ের ওপর। যেমন—প্যাপিলারি ক্যানসার যদি কেবল গ্রন্থির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, মানে যথাসময়ে নির্ণয় করা যায়, তবে এর সেরে ওঠার সম্ভাবনা সন্তোষজনক। আবার অ্যানাপ্লাস্টিক বা মেডুলারি ক্যানসারের বেলায় অতটা আশাবাদী হওয়া কঠিন। যেকোনো ধরনের থাইরয়েড ক্যানসারের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হচ্ছে, প্রথমে সার্জারি বা গ্রন্থিটি কেটে ফেলে দেওয়া। এর ফলে শরীরে থাইরয়েড হরমোনের চিরস্থায়ী অভাব পূরণ করার জন্য রোগীকে আজীবন থাইরক্সিন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে আজকাল সম্পূর্ণ গ্রন্থি ফেলে না দিয়ে একটি অংশ রেখে দেওয়া হয়, যাতে থাইরয়েড হরমোনের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারে। তবে অস্ত্রোপচার করা হলেই চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়ে যায় না। এ ধরনের রোগীকে ছয় মাস বা এক বছর পর পর বিশেষভাবে ফলোআপ করা হয়, যাতে ক্যানসারের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কি না বা দেহের কোথাও ক্যানসারের কোষ রয়ে গেছে কি না, তা ধরা যায়। এই ফলোআপ অনেক সময়ই জটিল ও বিভিন্ন ধাপে হয়ে থাকে এবং একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন হয়।
সব চাকাই ক্যানসার নয়, তবু সাবধান: থাইরয়েডে চাকা বা নডিউল বহুসংখ্যক মানুষের দেখা যায়, কিন্তু সুখের বিষয় যে এদের বেশির ভাগেরই ক্যানসার নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি এমন সব কারণে হয়ে থাকে, যার সহজ ও নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা আছে। সব চাকাই ক্যানসার নয়, শুধু কিছু কিছু চাকাই ক্যানসার। তাই থাইরয়েডে চাকা দেখা দিলে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, এটি ক্যানসার, না নিরীহ, তা নির্ণয় করা। এই ভেদটি নির্ণয় করা হলে পরবর্তী চিকিৎসায় আর কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। তাই গলার সামনে বা পাশে কখনো চাকাজাতীয় কিছু দেখতে পেলে বা অনুভব করলে অচিরেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং এটি ক্যানসার কি না, তা নিশ্চিত হন। মনে রাখবেন, থাইরয়েডের সমস্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি এনডেমিক জোন এবং জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে আমাদের দেশে নারীরা এই গ্রন্থির নানা সমস্যায় আক্রান্ত। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে গিয়ে একদিন হঠাৎ গলার ডান দিকের ফোলা অংশটা নজরে আসে শিপ্রার মায়ের। হাত দিয়েও জিনিসটা অনুভব করতে পারলেন তিনি। চিন্তিত হয়ে শিপ্রাকে ডেকে দেখালে সেও দুশ্চিন্তায় পড়ল বিষয়টি নিয়ে। কী করবে, কার কাছে যাবে—সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে অবশেষে একদিন বিকেলে মাকে নিয়ে সে গেল নাক-কান-গলার একজন বিশেষজ্ঞের কাছে। চিকিৎসক তাঁকে গলার থাইরয়েড গ্রন্থির একটা আলট্রাসনোগ্রাম করতে দিলেন; সঙ্গে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের কিছু পরীক্ষা। রিপোর্টগুলো নিয়ে পরদিন যাওয়ার পর নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ শিপ্রার মাকে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠালেন। এত দিন মাথায় ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নগুলো তাঁর কাছেই প্রথম খুলে বলল শিপ্রা। থাইরয়েডের সমস্যার কথা আজকাল অনেকের কাছেই শোনা যায়। থাইরয়েড আসলে কী? শরীরে এটি কি কাজ করে? থাইরয়েডের সমস্যা মানেই কি ঘ্যাগ রোগ? থাইরয়েডে চাকা থেকে কি ক্যানসার হতে পারে? চাকা হলে বা ফুলে গেলে কি কেটে ফেলে দেওয়া জরুরি? থাইরয়েড একটি অতিজরুরি গ্রন্থি: শিপ্রার মতো এমন সব প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের প্রায়ই হতে হয়। কেননা থাইরয়েড গ্রন্থির নানা সমস্যায় কেবল আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জীবনের বিভিন্ন সময় আক্রান্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপক সুযোগ ও সহজলভ্যতা এবং জনসাধারণ ও চিকিৎসকদের সচেতনতার কারণে এসব রোগ অনেক বেশি করে নির্ণয় করা যাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে থাইরয়েডের সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। থাইরয়েড আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। গলার সামনে অবস্থিত এই গ্রন্থি দুটি অংশে বিভক্ত, যা একটি সরু অংশ বা ইসথমাস দিয়ে সংযুক্ত। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে তৈরি হয় থাইরক্সিন ও ট্রাই আয়োডো থাইরনিন নামে দুটি হরমোন, যা জীবনভর আমাদের নানা শারীরিক কার্য সম্পাদনের জন্য অত্যন্ত দরকারি। শিশুকালে, এমনকি জন্মের আগে থেকেই শিশুর বৃদ্ধি বিশেষ করে মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য এই হরমোন জরুরি। হূদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, ত্বক, কিডনি, যকৃৎ, পেশি অর্থাৎ দেহের এমন কোনো অঙ্গ নেই, যার বৃদ্ধি ও কাজ করার জন্য থাইরয়েড হরমোনগুলোর সহায়তা লাগে না। থাইরয়েড হরমোনের অভাবে শিশুর জন্মগত প্রতিবন্ধিতা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা ও যৌবনপ্রাপ্ত হওয়া ব্যাহত হওয়া, বড়দের ক্লান্তি, কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গন্ডগোল, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, নাড়ি স্পন্দনে সমস্যা, হজম ও কোষ্ঠ সমস্যা, রক্তশূন্যতা, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে ধীরতা, মেয়েদের মাসিক ও গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি যেকোনো প্রকারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সব ধরনের সমস্যায় সব সময় গ্রন্থির আকার বড় হয় না বা চাকা দেখা যায় না। থাইরয়েড গ্রন্থিতে চাকা হওয়ার ব্যাপারটিকে চিকিৎসকদের ভাষায় বলা হয় থাইরয়েড নডিউল, যা কখনো কখনো ক্যানসার হতে পারে বটে, কিন্তু চাকামাত্রই ক্যানসার নয়। থাইরয়েডে চাকা কী কারণে হতে পারে?: থাইরয়েড নডিউল বা চাকা খুব একটা দুর্লভ ঘটনা নয়। বলা হয়, আমেরিকার জনসংখ্যার শতকরা ৪ ভাগেরই থাইরয়েডে চাকা আছে। আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আবার ধারণা করা হয়, সাধারণ জনগণের, বিশেষ করে নারীদের যদি গলার আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়, তবে শতকরা ৫০ ভাগেরই থাইরয়েডে চাকা পাওয়া যাবে, যদিও তা এমনিতে বোঝা যাচ্ছে না। তবে থাইরয়েডে ৯৫ শতাংশ চাকাই শেষ পর্যন্ত নিরীহ বা ননম্যালিগন্যান্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু ওই রয়ে যাওয়া ৫ শতাংশ ক্যানসারের আশঙ্কার কথা ভেবেই থাইরয়েড নডিউলকে সব সময় একটি বিশেষ বিবেচনায় দেখা হয়। থাইরয়েডে চাকা হতে পারে সাধারণ একটা সিস্ট (তরলপূর্ণ থলে), ঘ্যাগ রোগের অংশবিশেষ, আয়োডিনের অভাবজনিত সাধারণ গয়টার, থাইরয়েডে প্রদাহ, জন্মগত ত্রুটি বা নিরীহ গোছের কোনো টিউমার, যা নিয়ে আদৌ ভয়ের কিছু নেই। আবার এই চাকা হতে পারে থাইরয়েড ক্যানসারের একটি প্রথম এবং কখনো কখনো একমাত্র উপসর্গ, যে ক্যানসার আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে চাকাটি নিরীহ, না ক্যানসার, তা বোঝার জন্য রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস, চাকাটির ধরন-ধারণ, আকার-আকৃতি ইত্যাদি এবং কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কোন চাকাটির ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি: থাইরয়েডের সব সমস্যার মতো চাকাও নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কিন্তু পুরুষের এবং খুব অল্প বয়স আর খুব বেশি বয়সে (যেমন—১৪ বছরের আগে ও ৭০ বছরের পরে) গলায় চাকা হলে তা ভাবনার বিষয় বৈকি। সম্প্রতি গর্ভাবস্থার ইতিহাস ও পরিবারে মা-বোনদের হাইপোথাইরয়েড ও ঘ্যাগ রোগের ইতিহাস থাকলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে এটাও সে রকমই কিছু, ভয়ংকর হয়তো নয়। নিরীহ চাকা সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে একই রকম আছে বা খুব ধীরে বাড়ছে, অন্যদিকে দ্রুত বড় হয়ে ওঠা চাকার ক্যানসার হওয়ার দিকেই ঝুঁকি বেশি। ছেলেবেলায় ঘাড়, মাথা ও গলায় রেডিয়েশন বা বিকিরণ দেওয়ার ইতিহাস থাকাটা খারাপ। অনেক সময় শিশুদের লিমফোমা ও অন্যান্য রোগে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। চেরনোবিল দুর্ঘটনার চার বছর পর নিকটবর্তী বেলারুশ এবং আরও কিছু স্থানে হঠাৎ করে থাইরয়েড ক্যানসারের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই তেজস্ক্রিয় বিকিরণই দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক সেন্টিমিটারের ছোট আকার, নরম চাকা সাধারণত নিরীহ। অপর দিকে মাঝারি শক্ত বা শক্ত চাকা, গলার সঙ্গে সেঁটে থাকা চাকা, দুই সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় আকার, সঙ্গে গলা বা ঘাড়ের অন্যান্য লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, হঠাৎ করে গলার স্বর ভেঙে যাওয়া বা খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি আক্রান্ত হওয়া খারাপ লক্ষণ। রোগীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিস্তারিত ইতিহাস জানার পর এবং হাত দিয়ে চাকা ও গলা অনুভব করার পর চিকিৎসকের উচিত প্রথমেই গলার একটি আলট্রাসনোগ্রাফি করা এবং দেহে থাইরয়েড হরমোনের অবস্থা কী, তা রক্তে পরীক্ষা করে নেওয়া। আলট্রাসনোগ্রাফির কিছু রিপোর্ট চিকিৎসকের জন্য খুবই সহায়ক। বর্তমান কালের হাই রেজ্যুলিউশন আলট্রাসনোগ্রাফি এমন সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন চিহ্নিত করতে পারে, যেমন—হাইপোইকোজেনিসিটি (হ্রাসপ্রাপ্ত শব্দতরঙ্গ), এবড়োখেবড়ো সীমানা বা মার্জিন, মাইক্রোক্যালসিফিকেশন বা চাকার ভেতর ক্যালসিয়াম জমাট বাঁধা, চাকার অভ্যন্তরে রক্তনালির অস্বাভাবিকতা বা ক্যাওটিক আচরণ, আশপাশের লসিকাগ্রন্থি, নার্ভ ও অন্যান্য টিস্যুর অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি, যা চিকিৎসকের সন্দেহ উসকে দিতে বা দূর করতে খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখে। সন্দেহজনক চাকার ক্ষেত্রে এরপর অবশ্যই একটি নিডল বায়োপসি বা এফএনএসি করার প্রয়োজন পড়ে। এতে একটি সূক্ষ্ম সুচ চাকার মধ্যে ঢুকিয়ে খানিকটা টিস্যু বের করে এনে মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখা হয়। নিডল বায়োপসি দিয়েও একটি চাকা ক্যানসার কি না, তা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে বর্তমান বিশ্বে হিস্টোপ্যাথলজিস্টরা একটি থাইরয়েড চাকার ক্ষেত্রে মোট পাঁচ ধরনের রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। হয় তাঁরা বলবেন যে এটি পুরোপুরি বিনাইন বা নিরীহ; সে ক্ষেত্রে ফলোআপ করা ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন নেই। অথবা তাঁরা বলবেন যে এতে ক্যানসার সেল পাওয়া গেছে, অথবা পাওয়া যায়নি, কিন্তু অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ সন্দেহজনক, কিংবা এটি একটি ফলিকুলার কোষ দিয়ে তৈরি টিউমার, যা ক্যানসার হতেও পারে, না-ও হতে পারে। এই সব কটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত যাবে অপারেশনের পক্ষে। যদি হিস্টোপ্যাথলজিস্ট বলেন যে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না স্পষ্ট করে, যা প্রায়ই ঘটে থাকে, তবে পরীক্ষাটি পুনরায় করতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। সাধারণত থাইরয়েড চাকা যদি ক্যানসার হয়, তবে তা থাইরয়েড হরমোনের ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। হরমোনের রিপোর্ট সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকতে পারে। বরং হাইপার থাইরয়েড বা হরমোনের আধিক্য সাধারণত কখনোই ক্যানসারের ক্ষেত্রে ঘটে না। থাইরয়েড ক্যানসারের চিকিৎসা: থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর চাকায় ক্যানসারের চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে এর ধরন, ছড়িয়ে পড়ার সীমা ও স্টেজিংয়ের ওপর। যেমন—প্যাপিলারি ক্যানসার যদি কেবল গ্রন্থির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, মানে যথাসময়ে নির্ণয় করা যায়, তবে এর সেরে ওঠার সম্ভাবনা সন্তোষজনক। আবার অ্যানাপ্লাস্টিক বা মেডুলারি ক্যানসারের বেলায় অতটা আশাবাদী হওয়া কঠিন। যেকোনো ধরনের থাইরয়েড ক্যানসারের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হচ্ছে, প্রথমে সার্জারি বা গ্রন্থিটি কেটে ফেলে দেওয়া। এর ফলে শরীরে থাইরয়েড হরমোনের চিরস্থায়ী অভাব পূরণ করার জন্য রোগীকে আজীবন থাইরক্সিন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে আজকাল সম্পূর্ণ গ্রন্থি ফেলে না দিয়ে একটি অংশ রেখে দেওয়া হয়, যাতে থাইরয়েড হরমোনের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারে। তবে অস্ত্রোপচার করা হলেই চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়ে যায় না। এ ধরনের রোগীকে ছয় মাস বা এক বছর পর পর বিশেষভাবে ফলোআপ করা হয়, যাতে ক্যানসারের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কি না বা দেহের কোথাও ক্যানসারের কোষ রয়ে গেছে কি না, তা ধরা যায়। এই ফলোআপ অনেক সময়ই জটিল ও বিভিন্ন ধাপে হয়ে থাকে এবং একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন হয়। সব চাকাই ক্যানসার নয়, তবু সাবধান: থাইরয়েডে চাকা বা নডিউল বহুসংখ্যক মানুষের দেখা যায়, কিন্তু সুখের বিষয় যে এদের বেশির ভাগেরই ক্যানসার নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি এমন সব কারণে হয়ে থাকে, যার সহজ ও নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা আছে। সব চাকাই ক্যানসার নয়, শুধু কিছু কিছু চাকাই ক্যানসার। তাই থাইরয়েডে চাকা দেখা দিলে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, এটি ক্যানসার, না নিরীহ, তা নির্ণয় করা। এই ভেদটি নির্ণয় করা হলে পরবর্তী চিকিৎসায় আর কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। তাই গলার সামনে বা পাশে কখনো চাকাজাতীয় কিছু দেখতে পেলে বা অনুভব করলে অচিরেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং এটি ক্যানসার কি না, তা নিশ্চিত হন। মনে রাখবেন, থাইরয়েডের সমস্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি এনডেমিক জোন এবং জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে আমাদের দেশে নারীরা এই গ্রন্থির নানা সমস্যায় আক্রান্ত।

শিশুর কিডনির সমস্যা - লক্ষণ, রোগ নির্ণয় এবং প্রতিকার

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য কিডনির ভূমিকা অনস্বীকার্য। শরীরের নানা আবর্জনা এবং ক্ষতিকর তরল পদার্থ শরীর থেকে বের করে থাকে এই কিডনি। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে বিষাক্ত জিনিস শরীরে জমে জমে অসুস্থ হয় হূদযন্ত্র ও ফুসফুস। শরীরে পানি জমে, হয় শ্বাসকষ্ট। আমাদের শরীরে রয়েছে দুটো কিডনি। প্রতিটি কিডনি অনেকগুলো খুবই ছোট, অথচ জটিল একক নিয়ে গঠিত, এই এককের নাম হলো "নেফ্রোন"। প্রতিটি নেফ্রোনের কাজ হলো প্রস্রাব তৈরি করা আর এভাবে রক্ত থাকে বিষমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন।
পরিণত বয়সের কিডনি রোগীদের মতো, শিশু-কিশোরদের কিডনি রোগের উপসর্গ বা লক্ষনগুলো সাধারণত দৃশ্যমান হয় না বিধায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের কিডনি জনিত রোগগুলো অনেক দেরিতে সনাক্ত হয়।শিশুদের সাধারণত দুই ধরনের কিডনির রোগ বেশি হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে নেফ্রোটিক সিনড্রোম ও অ্যাকিউট নেফ্রাইটিস।
নেফ্রোটিক সিনড্রোম
নেফ্রোটিক সিনড্রোম লক্ষণ :- সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর হয়ে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। প্রথম দিকে দুই চোখের পাতা ফুলে যায় ও মুখে ফোলা ভাব দেখা যায়। পরে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পেটে, হাতে ও পায়ে পানি জমে এবং সারা শরীর ফুলে যায়। শিশুর অণ্ডকোষে পানি জমতে পারে। এর সঙ্গে কখনো বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, রং সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। শিশুর রক্তচাপ সচরাচর স্বাভাবিক থাকে। প্রস্রাব জ্বাল দিলে প্রোটিনের পুরু স্তর পাওয়া যায়।
রোগ নির্ণয় :-
  • প্রস্রাবে খুব বেশি পরিমাণে প্রোটিন বেরিয়ে যায় (৪০ মিলিগ্রাম)। প্রতি স্কয়ার মিটার সারফেস এরিয়া বা প্রতি ঘণ্টায় প্রস্রাবের বেশি।
  • সিরাম লিপিডে উচ্চ মাত্রা, ২২০ গ্রামের বেশি।
  • রক্তে অ্যালবুমিনের সর্বনিম্ন, ২ গ্রামের কম।
  • শিশুর সারা শরীর ফুলে যায়।
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিস
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের লক্ষণ :- প্রধানত স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগ হয়ে থাকে। শিশুর শরীরে খোসপাঁচড়া বা গলা ব্যথা অসুখের ১০ থেকে ২১ দিন পরে সাধারণভাবে এ রোগ প্রকাশ পায়। স্টেপটোকক্কাই নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এ জন্য দায়ী।
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের উপসর্গ :-
  • হঠাৎ করে চোখ-মুখ, সারা শরীর ফুলে যেতে পারে।
  • প্রস্রাব হয় বন্ধ কিংবা পরিমাণে খুব অল্প হতে পারে। বেশির ভাগ সময় প্রস্রাবের রং লাল থাকে।
  • কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন আগে গলা ব্যথা হয়ে থাকে। কখনো ত্বকে খোসপাঁচড়াজাতীয় চিহ্ন থাকে।
  • শিশুর রক্তচাপ বেশি থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি কি :-
  • প্রস্রাব পরীক্ষায় কিছুটা প্রোটিনের সঙ্গে আরবিসি কাস্ট পাওয়া যায়।
  • কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য ব্লাড ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন মাত্রা দেখা যায়। সিরাম পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রা ইসিজির সাহায্যেও বোঝা যেতে পারে।
বাচ্চার খোসপাঁচড়া বা গলাব্যথা অসুখে সময়মতো চিকিৎসা করাতে হবে। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের শিশু সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে সময় নষ্ট না করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। শিশুদের কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যা প্রথম পর্যায়েই সনাক্ত করা গেলে সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। তাই মা-বাবাকে শিশুর এই ধরনের সমস্যার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
কিডনি সংক্রান্ত এ সকল সমস্যায় শিশুদের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা দ্রুত ফলদায়ক এবং অধিকতর কার্যকরী। তাই নির্দিধায় আপনার শিশুর কিডনি সংক্রান্ত যে কোনো রোগে হোমিও ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এতে নেই কোনো প্রকার জটিলতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার চিন্তা।

অতিরিক্ত গরমও কিডনিতে পাথর হওয়ার জন্য দায়ী !

সম্প্রতি হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞ দলের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের 'কিডনিতে পাথর' রোগের পরিমানও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু কিভাবে ? খুব গরমে আপনি বারবিকিউ চিবোচ্ছেন, আইসক্রিম খাচ্ছেন, দারুণ মজা করছেন পরিবার-পরিজন অথবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সমুদ্র সৈকতে। আর এরই মধ্যে হয়তো আপনার কিডনিতে জমা হচ্ছে পাথর। আর এটা এমন এক যন্ত্রণা, যে ভুগেছে সেই শুধু জানে এর ব্যথা। 
ফ্লোরিডার জ্যাকসনভাইলের মেয়ো ক্লিনিক কিডনি স্টোন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইলিয়াম হ্যালি বলেন, 'কিডনিতে পাথর হওয়ার সবচেয়ে উর্বর সময় হচ্ছে আগস্ট। আগস্ট হচ্ছে বছরের সবচেয়ে উষ্ণ সময়।'  এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পার্সপেক্টিভ নামের একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ে একটি নতুন গবেষণাপত্র। তাতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন, যা ক্রমে উষ্ণ থেকে উষ্ণ হয়ে উঠছে, ভবিষ্যতে মানুষের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি বাড়াতে পারে।
ড. হ্যালির অন্তত এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, 'বৈশ্বিক উষ্ণতা যতই বাড়ছে, ততই মানুষের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। এটা আবহাওয়ার উষ্ণতার জন্য হলেও আমরা সে উষ্ণতাকে কীভাবে নিচ্ছি, সেটাও কিন্তু কম দায়ী নয়।
কথাটা অবশ্য এভাবেও বলা যায়। আমরা গরমে হাঁসফাস করছি, ঘামছি, কিন্তু আমরা শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া তরলের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট পরিমাণ পানি খাচ্ছি না। গরমে বন্ধুবান্ধব মিলে ঢক ঢক করে কোল্ডড্রিংক খাচ্ছি, সুযোগ পেলে হট ডগও বাদ দিচ্ছি না।
তারপর হামবার্গারসহ গরমে মজাদার এমন সব খাবারও গিলছি গোগ্রাসে। কিন্তু উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত পানীয়ের সঙ্গে এসব গুরুপাচ্য খাবার যে শরীরের বারোটা বাজাচ্ছে, তা খেয়াল করছি না। এসব খাবার আমাদের প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম বাড়াচ্ছে- আর অনেকের কিডনিতে পাথর জমার পথ পরিষ্কার করছে।
কিডনিতে পাথর হয় ক্যালসিয়াম কিংবা ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের সঙ্গে লবণের সংমিশ্রণে। এ উপাদানগুলো মিশ্রণের ফলে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি স্ফটিকসম কঠিন পদার্থ। এটাকেই বলে কিডনির পাথর। আর মাঝে মধ্যে এটার কারণ হলো শরীরে দিনের পর দিন তরল পদার্থের অপ্রতুলতা। সুতরাং পানি খান। কখনও শরীরকে ডিহাইড্রেশনে ফেলবেন না

কিডনিতে পাথর হলে কি কি করবেন?

কিডনি আমাদের শরীর থেকে প্রস্রাবের সাথে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে। কখনো কখনো লবনের সাথে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশে কিডনিতে একধরনের কঠিন পদার্থের জন্ম দেয়, যাকে আমরা কিডনির পাথর বলি। এই পাথর আকারে একটি ছোট লবনের দানা কিংবা কখনো কখনো পিংপং বল এর মত বড় হতে পারে। আমরা সহজে এই পাথরের উপস্থিতি বুঝতে পারি না যতক্ষণ না এটি আমাদের মূত্রনালির গায়ে ধাক্কা দেয় এবং একে সংকীর্ণ করার ফলে ব্যথার উদ্রেগ করে। কিডনিতে পাথরের লক্ষণ :- আসুন দেখে নিই কিডনির পাথরের ক্ষেত্রে কি কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে- পিঠে, পেটে কিংবা দুই পায়ের সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা অনুভব করা। ঘন ঘন প্রস্রাব করা এবং প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব করা। প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা। বমি বমি ভাব কিংবা বমি করা। আকস্মিকভাবে পেট বা পিঠে ব্যথা অনুভব করা কিংবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা মানেই কিডনিতে পাথরের লক্ষণ নয়, তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্ষ নেয়া প্রয়োজন, কারন হতে পারে এটি মারাত্নক কোন রোগের লক্ষণ। কিছু সাধারন উপদেশ :- কিডনিতে পাথর হলেই অপারেশন করতে হয় এমন ধারনা ঠিক নয়। ছোট অবস্থায় ধরা পরলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব, কারন ছোট আকৃতির পাথর সাধারনত প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। মনে রাখা প্রয়োজন, দৈনিক ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ উপযুক্ত পরিমানে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায় এবং কিডনির পাথরের ঝুঁকি এবং জটিলতা কমিয়ে আনে। কিডনিতে পাথর কেন হয় ? আমাদের প্রস্রাবে পানি, লবন ও খনিজ পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। বিভিন্ন কারনে আমাদের প্রস্রাবের উপাদানের এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যেমন- প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি পান করা। মাত্রাতিরিক্ত আমিষ/প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা। অতিরিক্ত খাবার লবন (সোডিয়াম সল্ট/টেবিল সল্ট) গ্রহন। অতিরিক্ত অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন যেমন চকলেট। শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করা। কিডনির পাথর সম্পর্কে সজাগ থাকুন, আপনার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এই অজাচিত সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে। কিডনিতে পাথর হলে কি করবেন? কিডনিতে পাথর হলে আপনি খুব সহজেই হোমিওপ্যাথি চিকিত্সার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর জন্য অযথা কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা খরচ না করে অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথের সাথে যোগাযোগ করে চিকিত্সা নিন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ও সফল হোমিওপ্যাথি চিকিত্সার মধ্যমে আপনি খুব তাড়াতাড়িই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।  বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

কোল্ডড্রিঙ্ক বাড়িয়ে দেয় কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা

আপনি যদি অতিরিক্ত কোল্ডড্রিঙ্ক প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে আজই সাবধান হোন। গরমের হাত থেকে বাঁচতে অথবা নেহাতই শখে কোল্ডড্রিংক আপনার রোজকার ডায়েটের অবিচ্ছেদ্দ্য অঙ্গ কোল্ডড্রিংক? তাহলে এবার একটু সাবধান হন। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ্যে এসেছে কোল্ডড্রিংক (যে কোনও সফট ড্রিঙ্ক) আপনার কিডনির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনিও কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন দিনে দু`বোতল কোল্ডড্রিঙ্ক প্রোটিনিউরিয়ার (মূত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রোটিনের নির্গমন) কারণ হয়। প্রোটিনিউরিয়া কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার নির্দেশক। ওহেই ইয়ামোতোর নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল তিন ধাপে স্বাভাবিক কিডনি ক্ষমতাযুক্ত ৩৫৭৯জনকে, ৩০৫৫ জনকে ও ১৩৪২ জনকে পর্যায়ক্রমে দিনে শূন্য, এক, একাধিকবার কোল্ডড্রিঙ্ক খাইয়ে দেখেছেন প্রথম ক্ষেত্রে ৮.৪%, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ৮.৯% ও তৃতীয় ক্ষেত্রে ১০.৭% প্রোটিনিউরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় তিন বছর ব্যাপী এই পরীক্ষাটি চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন কোল্ডড্রিংকে মিষ্টি স্বাদ তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ ফ্রুকটোস সিরাপ ব্যবহার করা হয় তা কিডনি বিকল করতে যথেষ্ট। কিডনির কোষ গুলি অতিরিক্ত নুন পুনঃশোষণ করে। এছাড়া এর ফলে ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হাইপার টেনশনও ব্যপক হারে বৃদ্ধি পায়।

খুব দ্রুত মাথা ব্যথা কমানোর কতিপয় থেরাপি

লাল লবঙ্গ চা পান করুন :- লবঙ্গের ঔষধি গুন এতটাই বেশী যে লবঙ্গ দেয়া লাল চা সহজেই কমিয়ে ফেলে মাথা ব্যাথা। কাজের চাপে এক কাপ লাল চা আপনাকে আবারো চাঙ্গা করে তুলতে পারে। আকুপ্রেশার থেরাপি :- এটি মাথা ব্যাথা কমানোর সবচাইতে পুরানো একটি পদ্ধতি। এটি মাথা ব্যাথা খুব সহজেই কয়ায়। ঘাড়ে ও মাথায় প্রেশার পয়েন্টে একুপ্রেশার থেরাপি ব্যভার করলে মাথা ব্যাথা কমে। বরফ থেরাপি :- এটি মাথা ব্যাথা কমানোর আক্ষরিক একটি পদ্ধতি। বরফের প্যাকেট মাথার উপর ধরলেও মাথা ব্যাথা কমে যায়। ল্যাভেন্ডার শুকে :- এক গবেষণায় বলা হয় ল্যাভেন্ডারের তেল শুকলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। গান শুনুন :- গান থেরাপির মতে গান শুনলে মাথা ব্যাথা কমে। গরম পানিতে গোসল :- মাথা ব্যাথা কমাতে ওয়ার্ম শাওয়ার বা গরম পানিতে গোসল একটা উপকারী উপায়। ধ্যান করুন :- ধ্যান বা মেডিটেশন কমাতে পারে আপনার মাথাব্যাথা। ঘরের এক কোনে চুপচাপ বসে চোখ বন্ধ করে গাড় শ্বাস নিলে মাথা ব্যাথা কমে যেতে পারে। অনেক দিন যাবৎ যদি মাথা ব্যথায় ভুগতে থাকেন অর্থাৎ সমস্যাটা যদি ক্রনিক হয়ে থাকে তাহলে ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলুন, চিকিত্সা নিন। আশা করি ঠিক হয়ে যাবেন।